প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর কমিউনিটি রেডিও
নিজেই তুলে ধরছেন ইচ্ছা আর চাওয়া-পাওয়ার কথা, সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছেন জমির প্রান্তে বসেই কৃষিবিষয়ক সমস্যার সমাধান এর উন্নয়নে চ্যালেঞ্জ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্, বিজ্ঞাপন নীতিমালা ও বিশেষ তহবিল
রফিকুল বাসার / আনিসুজ্জামান
প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠ এখন রেডিওতে। তার চাওয়া-পাওয়া তার ইচ্ছা সে নিজেই প্রকাশ করছে। জমির আলে বসে সমাধান আনছেন চাষের। ঘরে বসে সোচ্চার হচ্ছেন প্রতিবাদে। প্রকাশ করছেন নিজের সাংস্কৃতিক প্রতিভা। সব মিলিয়ে প্রান্তিক মানুষ তার কণ্ঠস্বর তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রান্তিক মানুষের এই কণ্ঠস্বর কমিউনিটি রেডিও। কৃষিজীবী, শ্রমজীবী, চরের মানুষ কিম্বা পল্লীর স্বভাবকবি, দুর্যোগে লড়াই করা উপকূলবাসী। অথবা সুবিধাবঞ্চিত নারী।, সকলে তার অবস্থান থেকে সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছেন এই কমিউনিটি রেডিও থেকে। নিজেরা অংশ নিচ্ছেন আবার উপভোগ করছেন।
অল্প সময়ে বাংলাদেশে যেমন জনপ্রিয় তেমনি কার্যকর হয়ে উঠেছে কমিউনিটি রেডিও। দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই করতে কিছু সমস্যা এখনো রয়েছে। অনেকটা বিদেশি অনুদাননির্ভর পরিচালনা বলে এর স্থায়িত্ব নিয়ে শংকিত অনেকে। তবে স্থানীয়ভাবে সরকারি বা বেসরকারি বিজ্ঞাপন প্রচার করা নিয়ে একটি নীতিমালা হচ্ছে। সেটি হলে এই সমস্যা কেটে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রেডিও পদ্মা, রেডিও নলতা, লোক বেতার, রেডিও পল্লীকণ্ঠ, রেডিও সাগরগিরি, রেডিও মহানন্দা, রেডিও মুক্তি, রেডিও চিলমারী, রেডিও ঝিনুক, কৃষি রেডিও, রেডিও সুন্দরবন, রেডিও নাফ, রেডিও বিক্রমপুর এবং বরেন্দ্র রেডিও। দেশের ১৪টি স্থানে এই ১৪টি কমিউনিটি রেডিও তাদের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। বাংলাদেশে কমিউনিটি রেডিওর বয়স এক বছরের একটু বেশি। তথ্য মন্ত্রণালয় ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে প্রথমবার কমিউনিটি রেডিও পরিচালনার অনুমোদন দেয়। অনুমোদন পাওয়ার পর এক এক রেডিও এক এক সময় সম্প্রচার শুরু করে। এছাড়া চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি দ্বীপজেলা ভোলার চরফ্যাশন এবং নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় দুটি কমিউনিটি রেডিও সম্প্রচারের প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয় ২০০৮ সালে কমিউনিটি রেডিও স্থাপন, সম্প্রচার ও পরিচালনা নীতিমালা প্রজ্ঞাপন জারি করে। অবশ্য ১৯৯৮ সাল থেকে নাগরিক সমাজ কমিউনিটি রেডিও সম্প্রচারের এই দাবি জানিয়ে আসছিল।
অল্প সময়ে বাংলাদেশে যেমন জনপ্রিয় তেমনি কার্যকর হয়ে উঠেছে কমিউনিটি রেডিও। দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই করতে কিছু সমস্যা এখনো রয়েছে। অনেকটা বিদেশি অনুদাননির্ভর পরিচালনা বলে এর স্থায়িত্ব নিয়ে শংকিত অনেকে। তবে স্থানীয়ভাবে সরকারি বা বেসরকারি বিজ্ঞাপন প্রচার করা নিয়ে একটি নীতিমালা হচ্ছে। সেটি হলে এই সমস্যা কেটে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। রেডিও পদ্মা, রেডিও নলতা, লোক বেতার, রেডিও পল্লীকণ্ঠ, রেডিও সাগরগিরি, রেডিও মহানন্দা, রেডিও মুক্তি, রেডিও চিলমারী, রেডিও ঝিনুক, কৃষি রেডিও, রেডিও সুন্দরবন, রেডিও নাফ, রেডিও বিক্রমপুর এবং বরেন্দ্র রেডিও। দেশের ১৪টি স্থানে এই ১৪টি কমিউনিটি রেডিও তাদের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। বাংলাদেশে কমিউনিটি রেডিওর বয়স এক বছরের একটু বেশি। তথ্য মন্ত্রণালয় ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে প্রথমবার কমিউনিটি রেডিও পরিচালনার অনুমোদন দেয়। অনুমোদন পাওয়ার পর এক এক রেডিও এক এক সময় সম্প্রচার শুরু করে। এছাড়া চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি দ্বীপজেলা ভোলার চরফ্যাশন এবং নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলায় দুটি কমিউনিটি রেডিও সম্প্রচারের প্রাথমিক অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয় ২০০৮ সালে কমিউনিটি রেডিও স্থাপন, সম্প্রচার ও পরিচালনা নীতিমালা প্রজ্ঞাপন জারি করে। অবশ্য ১৯৯৮ সাল থেকে নাগরিক সমাজ কমিউনিটি রেডিও সম্প্রচারের এই দাবি জানিয়ে আসছিল।
রেডিও পদ্মা স্বাবলম্বী হওয়ার পথে, দুর্যোগ-দুর্বিপাকে কমিউনিটির বন্ধু রেডিও নলতা, উপকূলের ভরসা হয়ে উঠেছে লোক বেতার, শিশুদের ইংরেজি শেখার অনুষ্ঠানে সাড়া ফেলেছে রেডিও পল্লীকণ্ঠ, কৃষকরা ফোন করে তথ্য জানতে পারেন রেডিও সাগরগিরি থেকে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ মনে করে রেডিও মহানন্দা। সামাজিক সমস্যার বিরুদ্ধে লড়ছে রেডিও মুক্তি। শ্রোতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ছে রেডিও চিলমারির। বর্ণিল অনুষ্ঠানে সেজেছে রেডিও ঝিনুক। কৃষি অনুষ্ঠান জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কৃষি রেডিওতে। নির্যাতনের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলছে বরেন্দ্র রেডিও। আবহাওয়ার শেষ তথ্য দিতে চেষ্টা করছে রেডিও নাফ। দুর্যোগে করণীয় বিষয়ে মানুষকে সচেতন করছে রেডিও সুন্দরবন। আর স্থানীয় মানুষের মধ্যে আগ্রহী করে তুলছে রেডিও বিক্রমপুর।
যারা এই রেডিও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন তারা বিদ্যুত্ না থাকাসহ কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করেছেন। তারা বলছেন, কমিউনিটি রেডিও'র উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ না থাকা। একই সাথে এই রেডিওর জন্য উন্নয়ন বিজ্ঞাপন নীতিমালা করা, উন্নয়ন তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া এবং কমিউনিটি রেডিওকে তথ্য মন্ত্রণালয়সহ সকল স্তরে মূলধারার গণমাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা।
কমিউনিটি রেডিও স্টেশনে কারিগরি ও দক্ষতা বাড়াতে সহায়তাকারী সংস্থা বাংলাদেশ এনজিও'স নেটওয়ার্ক ফর রেডিও এণ্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি) এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১৪টি কমিউনিটি রেডিও দৈনিক মোট ১০৮ ঘন্টা ৫০ মিনিট তথ্য, শিক্ষা, স্থানীয় বিনোদন এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধকরণ বিষয়ে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে। এসব কর্মসূচি সরকারের ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক। প্রত্যেক স্টেশনে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে উপদেষ্টা কমিটি আছে। স্টেশন পর্যায়ে মোট দুই হাজার ১১৫টি শ্রোতা ক্লাব আছে। কমিউনিটি রেডিওর বর্তমান শ্রোতা সংখ্যা প্রায় ৪৬ লাখ ৪৭ হাজার। বাংলাদেশের ১৩টি জেলার ৬৭টি উপজেলার মানুষ কমিউনিটি রেডিওর অনুষ্ঠান শুনছেন। রেডিও স্টেশনগুলোতে ৫৩৬জন যুবক এবং যুব নারী সম্প্রচারকর্মী হিসেবে কাজ করছেন।
স্থানীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং উপদেষ্টা কমিটির মাধ্যমে কমিউনিটি রেডিও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। ব্যবস্থাপনা কমিটি ও উপদেষ্টা কমিটির সদস্যরা অবৈতনিক এবং স্বেচ্ছাসেবী। কিছু কিছু স্টেশনে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়ন রয়েছে। উদ্যোক্তা সংস্থাগুলোর সহায়তাও রয়েছে।
বিএনএনআরসি এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম বজলুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, কমিউনিটি রেডিও টেকসই করতে উন্নয়ন বিজ্ঞাপন নীতিমালা করা ও তা বাস্তবায়ন এ মুহূর্তে খুবই জরুরি। স্থানীয় ও জাতীয় সরকারের সাথে বাজেটে বরাদ্দ অংশিদারিত্ব নিশ্চিত করা দরকার। কমিউনিটি রেডিও নীতিমালার আলোকে সরকার কমিউনিটি রেডিও উন্নয়ন তহবিল গঠন ও পরিচালনার উদ্যোগ নিতে পারে।
তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার করা এই রেডিও'র উদ্দেশ্য। এখানে প্রান্তিক মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। স্থানীয় জনগণের লোকজ জ্ঞান, সম্পদ ও সংস্কৃতি , আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটবে। প্রান্তিক পর্যায়ে বসবাস করা জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা ও তাদের মালিকানায় পরিচালিত একটি গণমাধ্যম হচ্ছে কমিউনিটি রেডিও।
কমিউনিটি রেডিও সম্প্রচারের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন তিনটি একইরকম বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ করেছে। তরঙ্গগুলো হলো ৯৯.২, ৯৮.৮ এবং ৯৮.৪। ২০১১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিউনিটি রেডিওগুলো পর্যায়ক্রমে সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে পাঁচটি কমিউনিটি রেডিও সাফল্যজনকভাবে এক বছর সম্প্রচারের কার্যক্রম শেষ করেছে। কমিউনিটি রেডিও সমপ্রচারে এফএম ট্রান্সমিটার ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিটি স্টেশনের ব্যাপ্তি এর অবস্থানকে কেন্দ্র করে চতুর্দিকে ১৭ কিলোমিটার। অর্থাত্ যেখানে স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে তার ১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত তাদের সমপ্রচার করা অনুষ্ঠান শোনা যাচ্ছে। এজন্য সর্বোচ্চ ১০০ ওয়াট সমপ্রচার শক্তির ট্রান্সমিটার ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা ২৫০ ওয়াট পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। এন্টিনা টাওয়ার ভূমি থেকে সর্বোচ্চ ৩২ মিটার।
দেশে শুরু হওয়া প্রথম কমিউনিটি রেডিও স্টেশন 'রেডিও পদ্মা' ও এর সম্প্রচার এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহীর পার্শ্ববর্তী পদ্মা নদীর চরগুলোতে বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রাণের প্রচারমাধ্যম হয়ে উঠেছে। সেই সাথে সুবিধাবঞ্চিত চরের মানুষদের কণ্ঠ জাগরণে এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করে তুলে জীবনমান উন্নয়নে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে এই রেডিও।
রাজশাহীর পার্শ্ববর্তী পদ্মা নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় চর। এগুলোর মধ্যে চর মাজারদিয়াড়, চরখিদিরপুর, চর আষাড়ীদহ, নির্মলচর অন্যতম। এসব চরগুলোতে বসবাস করছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। পদ্মা চরের মানুষদের শিক্ষা, চিকিত্সা, কৃষিচাষ, পশুপালন ও মত্স্যচাষে নানা প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জানাতে সহায়তা করে চলেছে রেডিও পদ্মা। সমপ্রচার শুরুর পর থেকেই রেডিও পদ্মা নিয়মিত প্রচার করে চলেছে 'পদ্মা পাড়ের জীবন' নামে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। পদ্মা'র চরের প্রায় সকল মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই অনুষ্ঠান। প্রতি মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এবং বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় এই অনুষ্ঠানটি প্রচার হয়। পদ্মা'র প্রতিটি চরের বাজারগুলোতে রেডিও ছেড়ে সবাই মিলে দল বেঁধে শোনে তাদের প্রিয় এই অনুষ্ঠান। অনেক চরবাসী মোবাইল ফোনে রেডিও পদ্মা'র অনুষ্ঠান নিয়মিত শুনে থাকে। রেডিও পদ্মা'র প্রযোজক ও রিপোর্টাররা চরের মানুষের কাছে তাদের কৃষিচাষ, পশুপালন ও মত্স্যচাষ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো জানার পর তার উপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠান তৈরি করে থাকে।
রাজশাহী মহানগরীর কৃষি কর্মকর্তা, পশু কর্মকর্তা ও মত্স্য কর্মকর্তাদের সাক্ষাত্কার নিয়ে তারা তৈরি করে এই অনুষ্ঠান। ফলে চরবাসী তাদের কৃষিচাষ, পশুপালন ও মত্স্যচাষ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের কথা এই অনুষ্ঠান শোনার মাধ্যমে অতি সহজে জানতে সক্ষম হয়। এছাড়া তারা চরের জমিতে কোন ফসল আবাদ করবে, কখন জমিতে সার দেয়া লাগবে, কি সার দিতে হবে, জমিতে পোকা লাগলে কি কিটনাশক ব্যবহার করবে, গবাদিপশুর রোগ হলে কি ওষুধ খাওয়াবে, চরের ছোট ছোট ডোবাগুলোতে কিভাবে মাছ চাষ করবে- ইত্যাদি সব তথ্য চরবাসী জানতে পারে রেডিও পদ্মা'র অনুষ্ঠান থেকে। এর ফলে খু্ব প্রয়োজন ছাড়া তাদের বিশাল নদী পার হয়ে আর নগরীর কৃষি অফিস, পশু অফিস কিংবা মত্স্য অফিসে আসতে হয় না। চরে বসে থেকেই নানা সমস্যা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ও পরামর্শ জেনে নিতে পারে রেডিও পদ্মা'র মাধ্যমে।
রেডিও পদ্মা'র প্রযোজক হাসান রাজিব বলেন, চরের মানুষদের শিক্ষা, চিকিত্সা, কৃষিচাষ, পশুপালন ও মত্স্যচাষ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দেয়ার চেষ্টা করছি। রেডিও পদ্মা'র রিপোর্টার নাজমূল সালেহীন পদ্মা'র চরগুলোতে অবস্থান করে তুলে ধরছে এখানকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর বিভিন্ন সমস্যার কথা। নিজেদের সমস্যাগুলো নিজ কণ্ঠে বলতে পেরে তৃপ্তি পাচ্ছেন চরের মানুষগুলো। চরের মানুষদের মধ্যে বাল্যবিবাহ, অধিক সন্তান গ্রহণ, নিরাপদ পানীয় জল, স্যানিটেশন, পণ্য আনা নেয়া, পণ্য বাজারজাতকরণ, শিক্ষা ও বিভিন্ন রোগের চিকিত্সা ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য দেয়ায় সহায়তা করছে রেডিও পদ্মা।
চরের মানুষ রেডিও পদ্মা'র অনুষ্ঠান শুনে যেমন সচেতন ও সজাগ হয়ে উঠছেন, ঠিক তেমনি তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন। চরের অনেক মানুষ নিয়মিত লোকজ গানের চর্চা করে থাকে। তাদের এই সঙ্গীতচর্চার প্রকাশ ঘটনাতেও এগিয়ে এসেছে রেডিও পদ্মা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পদ্মা চরের মানুষদের সাংস্কৃতিক প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিচ্ছে।
বিশ্বে কমিউনিটি রেডিও'র বয়স প্রায় ৬৫ বছর। ল্যাটিন আমেরিকায় এর উত্পত্তি। দারিদ্র্য ও সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এই রেডিও যাত্রা শুরু করে ১৯৪৮ সালে। ১৯৪৮ সালে বলিভিয়ায় 'মাইনার্স রেডিও' এবং কলম্বিয়ায় 'রেডিও সুতাতেনজা' কমিউনিটি রেডিওর প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে অগ্রদূত। সেই প্রেরণায় এখনো বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই রেডিও স্থাপন হচ্ছে। মাইনার্স রেডিও মাক্সবাদী ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার দ্বন্দ্বের মাঝের শক্তি হিসেবে কাজ করত। প্রচার করত খনি শ্রমিকদের উপযুক্ত কাজের পরিবেশ এবং শ্রম নিযুক্তির জন্য জনগণকে সংগঠিত করতে অনুষ্ঠান। শ্রমিকরাই অর্থ দিয়ে পরিচালনা ও সম্প্রচার করত এই রেডিও। রেডিও সুতাতেনজা সাধারণ মানুষের কাছে এমন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে বছরে প্রায় ৫০ হাজার চিঠি আসতো। সুতাতেনজা প্রকৃত অর্থে জনগণের পরিচালনায় জনগণের রেডিও হয়ে উঠেছিল এটি। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম কমিউনিটি রেডিও নীতিমালা করে ভারত, ২০০৬ সালে। ভারতে বর্তমানে কমিউনিটি রেডিও এবং ক্যাম্পাস রেডিও আছে।
বাংলাদেশে নীতিমালা অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় নীতি মেনে এই রেডিও অনুষ্ঠান সম্প্রপ্রচার করবে। প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে কোন ধর্ম, সমপ্রদায় অথবা জনগোষ্ঠীর প্রতি কটাক্ষ করা যাবে না। অশ্লীল, মানহানিকর, বিদ্বেষমূলক, অন্ধবিশ্বাসজাত প্রচারণা, নারী ও শিশুর জন্য অবমাননা, প্রতিবন্ধী অবহেলা, মাদককে সমর্থন করে এমন বিষয় সমপ্রচার করা যাবে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী অধিকার, উন্নয়ন, পরিবেশ, স্থানীয় সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয় প্রচার করা যাবে।
------------------তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার করা এই রেডিও'র উদ্দেশ্য। এখানে প্রান্তিক মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। স্থানীয় জনগণের লোকজ জ্ঞান, সম্পদ ও সংস্কৃতি , আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটবে। প্রান্তিক পর্যায়ে বসবাস করা জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা ও তাদের মালিকানায় পরিচালিত একটি গণমাধ্যম হচ্ছে কমিউনিটি রেডিও।
কমিউনিটি রেডিও সম্প্রচারের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন তিনটি একইরকম বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ করেছে। তরঙ্গগুলো হলো ৯৯.২, ৯৮.৮ এবং ৯৮.৪। ২০১১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিউনিটি রেডিওগুলো পর্যায়ক্রমে সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে পাঁচটি কমিউনিটি রেডিও সাফল্যজনকভাবে এক বছর সম্প্রচারের কার্যক্রম শেষ করেছে। কমিউনিটি রেডিও সমপ্রচারে এফএম ট্রান্সমিটার ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিটি স্টেশনের ব্যাপ্তি এর অবস্থানকে কেন্দ্র করে চতুর্দিকে ১৭ কিলোমিটার। অর্থাত্ যেখানে স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে তার ১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত তাদের সমপ্রচার করা অনুষ্ঠান শোনা যাচ্ছে। এজন্য সর্বোচ্চ ১০০ ওয়াট সমপ্রচার শক্তির ট্রান্সমিটার ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা ২৫০ ওয়াট পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। এন্টিনা টাওয়ার ভূমি থেকে সর্বোচ্চ ৩২ মিটার।
দেশে শুরু হওয়া প্রথম কমিউনিটি রেডিও স্টেশন 'রেডিও পদ্মা' ও এর সম্প্রচার এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহীর পার্শ্ববর্তী পদ্মা নদীর চরগুলোতে বসবাসরত সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রাণের প্রচারমাধ্যম হয়ে উঠেছে। সেই সাথে সুবিধাবঞ্চিত চরের মানুষদের কণ্ঠ জাগরণে এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করে তুলে জীবনমান উন্নয়নে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে এই রেডিও।
রাজশাহীর পার্শ্ববর্তী পদ্মা নদীকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ছোট-বড় চর। এগুলোর মধ্যে চর মাজারদিয়াড়, চরখিদিরপুর, চর আষাড়ীদহ, নির্মলচর অন্যতম। এসব চরগুলোতে বসবাস করছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। পদ্মা চরের মানুষদের শিক্ষা, চিকিত্সা, কৃষিচাষ, পশুপালন ও মত্স্যচাষে নানা প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জানাতে সহায়তা করে চলেছে রেডিও পদ্মা। সমপ্রচার শুরুর পর থেকেই রেডিও পদ্মা নিয়মিত প্রচার করে চলেছে 'পদ্মা পাড়ের জীবন' নামে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান। পদ্মা'র চরের প্রায় সকল মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই অনুষ্ঠান। প্রতি মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এবং বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় এই অনুষ্ঠানটি প্রচার হয়। পদ্মা'র প্রতিটি চরের বাজারগুলোতে রেডিও ছেড়ে সবাই মিলে দল বেঁধে শোনে তাদের প্রিয় এই অনুষ্ঠান। অনেক চরবাসী মোবাইল ফোনে রেডিও পদ্মা'র অনুষ্ঠান নিয়মিত শুনে থাকে। রেডিও পদ্মা'র প্রযোজক ও রিপোর্টাররা চরের মানুষের কাছে তাদের কৃষিচাষ, পশুপালন ও মত্স্যচাষ সংক্রান্ত সমস্যাগুলো জানার পর তার উপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠান তৈরি করে থাকে।
রাজশাহী মহানগরীর কৃষি কর্মকর্তা, পশু কর্মকর্তা ও মত্স্য কর্মকর্তাদের সাক্ষাত্কার নিয়ে তারা তৈরি করে এই অনুষ্ঠান। ফলে চরবাসী তাদের কৃষিচাষ, পশুপালন ও মত্স্যচাষ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের কথা এই অনুষ্ঠান শোনার মাধ্যমে অতি সহজে জানতে সক্ষম হয়। এছাড়া তারা চরের জমিতে কোন ফসল আবাদ করবে, কখন জমিতে সার দেয়া লাগবে, কি সার দিতে হবে, জমিতে পোকা লাগলে কি কিটনাশক ব্যবহার করবে, গবাদিপশুর রোগ হলে কি ওষুধ খাওয়াবে, চরের ছোট ছোট ডোবাগুলোতে কিভাবে মাছ চাষ করবে- ইত্যাদি সব তথ্য চরবাসী জানতে পারে রেডিও পদ্মা'র অনুষ্ঠান থেকে। এর ফলে খু্ব প্রয়োজন ছাড়া তাদের বিশাল নদী পার হয়ে আর নগরীর কৃষি অফিস, পশু অফিস কিংবা মত্স্য অফিসে আসতে হয় না। চরে বসে থেকেই নানা সমস্যা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যাদি ও পরামর্শ জেনে নিতে পারে রেডিও পদ্মা'র মাধ্যমে।
রেডিও পদ্মা'র প্রযোজক হাসান রাজিব বলেন, চরের মানুষদের শিক্ষা, চিকিত্সা, কৃষিচাষ, পশুপালন ও মত্স্যচাষ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য দেয়ার চেষ্টা করছি। রেডিও পদ্মা'র রিপোর্টার নাজমূল সালেহীন পদ্মা'র চরগুলোতে অবস্থান করে তুলে ধরছে এখানকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর বিভিন্ন সমস্যার কথা। নিজেদের সমস্যাগুলো নিজ কণ্ঠে বলতে পেরে তৃপ্তি পাচ্ছেন চরের মানুষগুলো। চরের মানুষদের মধ্যে বাল্যবিবাহ, অধিক সন্তান গ্রহণ, নিরাপদ পানীয় জল, স্যানিটেশন, পণ্য আনা নেয়া, পণ্য বাজারজাতকরণ, শিক্ষা ও বিভিন্ন রোগের চিকিত্সা ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য দেয়ায় সহায়তা করছে রেডিও পদ্মা।
চরের মানুষ রেডিও পদ্মা'র অনুষ্ঠান শুনে যেমন সচেতন ও সজাগ হয়ে উঠছেন, ঠিক তেমনি তাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরার সুযোগ পাচ্ছেন। চরের অনেক মানুষ নিয়মিত লোকজ গানের চর্চা করে থাকে। তাদের এই সঙ্গীতচর্চার প্রকাশ ঘটনাতেও এগিয়ে এসেছে রেডিও পদ্মা। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পদ্মা চরের মানুষদের সাংস্কৃতিক প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিচ্ছে।
বিশ্বে কমিউনিটি রেডিও'র বয়স প্রায় ৬৫ বছর। ল্যাটিন আমেরিকায় এর উত্পত্তি। দারিদ্র্য ও সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এই রেডিও যাত্রা শুরু করে ১৯৪৮ সালে। ১৯৪৮ সালে বলিভিয়ায় 'মাইনার্স রেডিও' এবং কলম্বিয়ায় 'রেডিও সুতাতেনজা' কমিউনিটি রেডিওর প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে অগ্রদূত। সেই প্রেরণায় এখনো বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই রেডিও স্থাপন হচ্ছে। মাইনার্স রেডিও মাক্সবাদী ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার দ্বন্দ্বের মাঝের শক্তি হিসেবে কাজ করত। প্রচার করত খনি শ্রমিকদের উপযুক্ত কাজের পরিবেশ এবং শ্রম নিযুক্তির জন্য জনগণকে সংগঠিত করতে অনুষ্ঠান। শ্রমিকরাই অর্থ দিয়ে পরিচালনা ও সম্প্রচার করত এই রেডিও। রেডিও সুতাতেনজা সাধারণ মানুষের কাছে এমন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে বছরে প্রায় ৫০ হাজার চিঠি আসতো। সুতাতেনজা প্রকৃত অর্থে জনগণের পরিচালনায় জনগণের রেডিও হয়ে উঠেছিল এটি। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম কমিউনিটি রেডিও নীতিমালা করে ভারত, ২০০৬ সালে। ভারতে বর্তমানে কমিউনিটি রেডিও এবং ক্যাম্পাস রেডিও আছে।
বাংলাদেশে নীতিমালা অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় নীতি মেনে এই রেডিও অনুষ্ঠান সম্প্রপ্রচার করবে। প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে কোন ধর্ম, সমপ্রদায় অথবা জনগোষ্ঠীর প্রতি কটাক্ষ করা যাবে না। অশ্লীল, মানহানিকর, বিদ্বেষমূলক, অন্ধবিশ্বাসজাত প্রচারণা, নারী ও শিশুর জন্য অবমাননা, প্রতিবন্ধী অবহেলা, মাদককে সমর্থন করে এমন বিষয় সমপ্রচার করা যাবে না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী অধিকার, উন্নয়ন, পরিবেশ, স্থানীয় সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয় প্রচার করা যাবে।
Bazlu
________________________
AHM. Bazlur Rahman-S21BR | Chief Executive Officer |Bangladesh NGOs Network for Radio and Communication (BNNRC)
[NGO in Special Consultative Status with the UN Economic and Social Council]
House: 13/3, Road: 2, Shaymoli, Dhaka-1207| Bangladesh
Phone: | 9101479 | Cell: +88 01711881647
Fax: 88-02-9138501 | E-mail: ceo@